অনলাইনের ভুয়া ঘটক চেনার উপায়!


অনলাইনে মাঝে মাঝেই একটা করে ভণ্ডামি ব্যবসার ট্রেন্ড উঠে। বর্তমানে যে কয়টা ভণ্ডামি ব্যবসার ট্রেন্ড চলছে তার মধ্যে একটি হলো অনলাইনভিত্তিক ডিজিটাল ঘটক সেবা। ফেসবুকের বিবাহ বিষয়ক বিভিন্ন গ্রুপে "পাত্র/ পাত্রী চাই" এরূপ পোস্টের কমেন্ট সেকশনে এদের বিজ্ঞাপনের আনাগোনা প্রচুর। অনেক ভুয়া ঘটক আবার ফেসবুক গ্রুপে সুন্দর একটা মেয়ের ফটো পোস্ট করে ক্যাপশন দেয় "পাত্র চাই, আগ্রহী পাত্র বা পাত্রপক্ষের লোকজন যোগাযোগ করুন"। সচেতন না হলে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে এই ঘটক আসল নাকি ভুয়া।
ভুয়া ঘটক চিনতে হলে প্রথমেই আপনাকে অনলাইনের আসল ঘটকের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে, তাহলে আপনি আসল ঘটক ও ভুয়া ঘটকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন। আসল ঘটকের কাজের সিস্টেম হলো সে প্রথমে আপনার কাছে জানতে চাইবে আপনি কী করেন? কেমন পাত্রী চান? এবং কোন জেলা/ বিভাগের পাত্রী চান? এরপর তিনি সেইমাফিক আপনাকে মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন পাত্রীর ম্যারেজ প্রোফাইল (বিয়ের বায়োডাটা) ও ফটো দিবেন, তবে তিনি বায়োডাটাতে পাত্রীর ফোন নাম্বার, বাবার নাম এবং গ্রামের নাম এসব তথ্য দিবেন না, শুধু জেলা ও উপজেলার নাম আপনাকে জানাবেন। এরপর এসবের মধ্যে কোনো পাত্রী আপনার পছন্দ হলে তাদের প্রতিষ্ঠান সেই অঞ্চলের মিটআপ গাইড হিসেবে যে কাজ করে তার সাথে যোগাযোগ করে দেবে এবং এজন্য মিটআপ গাইডের ফি কত হবে তা ঠিকঠাক করে নেবে, এরপর তারা আপনাকে সুবিধাজনক কোনো একটা বাজার বা জায়গার নাম বলবে সেখানে নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে আপনাদের যানবাহনে করে মিটআপ গাইডকে সঙ্গে নিয়ে পাত্রীর বাসায় যেতে হবে। আর মিটআপ শেষে মিটআপ গাইডকে তার নির্ধারিত ফি দিতে হবে। এভাবে করার পর কোনো একটা পাত্রীর সাথে বিয়ের বিষয় চূড়ান্ত হলে আপনাকে মিডিয়া ফি দিতে হবে যা পূর্বে থেকেই নির্ধারণ করা থাকবে যে তাদের মাধ্যমে বিয়ে চূড়ান্ত হলে এতো টাকা মিডিয়া ফি দিতে হবে। আবার যদি ঘটক বুঝে যান যে আপনার কাজ করতে তার কোনো ঝুঁকি নেই, আপনার উপর আস্থা রাখা যায় তাহলে তিনি আপনাকেই পাত্রীর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিবেন।

👉 আসল ঘটক যা যা করেন এবং যা যা করেন না—
ক) আসল ঘটক 'রেজিস্ট্রেশন ফি' কিংবা 'মিটআপ ফি' এর নাম করে কোনো অগ্রিম টাকা আপনার কাছে চাইবে না।
খ) আসল ঘটক কোনো পাত্রের কাজে হাত দেওয়ার আগে বিভিন্নভাবে পাত্রকে যাচাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন যে সে আসলে সৎ ও ওয়াদাবান কি না, যদি কোনোভাবে তিনি বুঝতে পারেন যে এই পাত্র সুবিধার হবে না ও কাজ করার পর কাজের সম্মানী না দেওয়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে তিনি তার কাজই করবেন না।
গ) বাংলাদেশের কিছু কিছু জেলা ও উপজেলা আছে যে অঞ্চলের লোকজন ৯০%+ হলো চিটার বাটপার যারা কাজ করে নেওয়ার পর পারিশ্রমিক দেয় না, এসব এলাকার কোনো পাত্র নক করলে আসল ঘটক সেই পাত্রকে বলে দেন যে তিনি যেমন পাত্রী চান তার কাছে সেরূপ পাত্রী নেই। তার সন্ধানে সেরূপ পাত্রী থাকলেও তিনি এভাবেই এসব অঞ্চলের লোকদেরকে এড়িয়ে চলেন।
ঘ) কোনো নির্দিষ্ট এলাকার পাত্রী আসল ঘটকের সন্ধানে না থাকলে তিনি সেটা খুলেই বলেন যে তার সন্ধানে নেই। "কিছু টাকা দেন, আমি ওই এলাকায় লোক লাগাচ্ছি" এ ধরণের কথা আসল ঘটক বলেন না।

এবার আসুন অনলাইনের ভুয়া ঘটকের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করি। ভুয়া ঘটকের কাজের মাঝে একটা বিষয় দেখতে পাবেন যে তারা বিভিন্ন যুক্তিতে আপনার কাছে অগ্রিম টাকা চাইবেন এবং এমন একটা ভাব দেখাবেন যে আপনার বিয়ের বিষয়ে আপনার চেয়ে তারই তাড়াহুড়ো বেশি। এছাড়াও আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেসব থেকে আপনি সহজেই ভুয়া ঘটক চিনতে পারবেন।

👉 ভুয়া ঘটক যা যা করেন—
ক) প্রথমেই আপনার কাছে রেজিস্ট্রেশন ফি চাইবে এবং জানাবে যে রেজিস্ট্রেশন ফি ছাড়া তারা কাজে হাত দেবে না। আর রেজিস্ট্রেশন ফি চাওয়ার পেছনে তাদের যুক্তি হলো অনেক ছিঁচকে পোলাপান প্রেম করার উদ্দেশ্যে মেয়েদের ফটো ও ফোন নাম্বার পাওয়ার জন্য পাত্র সেজে তাদের কাছে পাত্রীর পরিচিতি চায় এবং এতে তাদের অহেতুক সময় ব্যয় হয়, তাই তারা রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু করেছে, এতে করে যারা সত্যিই রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদেরকে তারা রিয়েল পাত্র হিসেবে ধরে নেয় এবং তাদের জন্য কাজ করে। আর এই যুক্তিতেই তারা আপনাকে ঘায়েল করে ফেলবে। কয়েকটি ভিন্ন পদ্ধতি আছে এবং চাইলেই তার কোনো একটি প্রয়োগ করে এরূপ ছিঁচকে পোলাপানকে সনাক্ত করে তাদেরকে এড়িয়ে চলা যায়। কিন্তু তারা সেটা করবে না, কারণ তারা তো আসলে ঘটকই নয়, তারা রেজিস্ট্রেশন ফি নেওয়ার বিষয়ে যুক্তি দেখাবে। আর এটাই হলো তাদের মূল কাজ।
খ) আপনি বিকাশের মাধ্যমে ফি দিতে চাইলে এবং "কিছুক্ষণ পরে দিবো" একথা বললে এরা একঘণ্টা পরপরই বারবার আপনাকে মেসেজ করবে এবং ঘনঘন ফোন দিয়ে বলবে "রেজিস্ট্রেশন ফি তো এখনও দিলেন না, ফি কখন দিবেন?"। বুঝতেই পারছেন যে এদের আসলে অন্যকোনো কাজ নেই এবং অন্যকোনও বিষয়ে ব্যস্ততাও নেই, তাই বারবার আপনাকে নক করছে। আর টাকা পাঠানো হলে তারা ধন্যবাদ দিয়ে বলবে যে আপনার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন তারা আপনার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর তিন/ চার ঘন্টা পর শুরু হবে তাদের প্রতারণার দ্বিতীয় ধাপ।
গ) এবার এরা অনলাইন কিংবা ফটো স্টুডিও থেকে সংগ্রহ করা কিছু অপরিচিত সুন্দর মেয়ের ছবি ব্যবহার করে তৈরি করা ভুয়া ম্যারেজ প্রোফাইল আপনাকে দেখাবে কিংবা আপনাকে কোনো মেয়ের তথ্যই দেখাবে না শুধু বলবে যে আপনাকে ২/৩ জন পছন্দ করেছে, তাদেরকে একে একে আপনার কাছে পাঠাবো, তবে তারা সবাই ধার্মিক পরিবারের লোকজন তাই কেউই ফটো দিতে চাচ্ছে না, তবে আস্থা রাখুন মেয়ে অনেক সুন্দর, আর সেজন্যই তারা সেফ থাকতে চাচ্ছে, আজকাল তো সুন্দর মেয়েদের ফটো নিয়ে অনেকে অনেক কিছু করে, বুঝেনই তো এসব, তবে মেয়ের ভাইয়ের ফোনে মেয়ের ফটো আছে, তার ফোন হাতে নিয়ে ফটো দেখতে পারবেন এবং প্রাথমিক পছন্দ হলে এবং তারাও আপনাকে পুরোপুরি পছন্দ করলে বাসায় গিয়ে মেয়ে দেখে আসবেন; আপনার পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিন, আগামীকাল কি আপনি ফ্রি আছেন? ফ্রি থাকলে আগামীকাল এক পাত্রীপক্ষের লোকজন আপনার কাছে যাবে এবং আমাদের মিটআপ গাইড তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আপনার ঠিকানায় যাবে, তাই যেহেতু যাতায়াত খরচের বিষয় আছে। আপনি মিটআপ ফি টা অ্যাডভান্স পেমেন্ট করুন। এই বলে তারা অগ্রিম ১০০০/ ১২০০/ ১৫০০ টাকা মিটআপ ফি চাইবে আর এর সাথে তারা আপনাকে আশ্বস্ত করে একথাও বলবে যে এরপর আর কোনো মিটআপ ফি দিতে হবে না। একবার ভাবুন তো— একবারের মিটআপ ফি দিয়ে তো সেটা একবারের যাতায়াত ও চা নাস্তাতেই খরচ হয়ে যাবে, তাহলে পরবর্তী মিটআপগুলো কি কোনো টাকা ছাড়া হাওয়া থেকে হবে? নাকি সেটা ঘটক মিডিয়া নিজে খরচ করবে? ঘটকের কী এমন দায় পড়ে গেছে আপনার জন্য? সুতরাং বুঝতেই পারছেন কথাবার্তা সুবিধার নয় এবং অসংলগ্ন সামঞ্জস্যহীন কথাবার্তা। যাদের মাথায় অল্প একটু ঘিলু আছে তারা সহজেই এই বিষয়টা বুঝে যাবেন এবং এটা যে ভণ্ড ঘটক তাও এতেই সহজেই বুঝে যাবেন।
ঘ) টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যে কোথাওকার পাত্রীই ও যেকোনো ধরণের পাত্রীই এদের কাছে চান এরা বলবে হ্যাঁ এরূপ পাত্রী আছে, এবং তারা সেজন্য প্রথমে রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে বলবে। আপনি একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভাবুন তো সারাদেশের যেকোনো অঞ্চলের যেকোনো ধরণের পাত্রীর সন্ধান যারা দিতে পারে তারা অবশ্যই বিশাল এক ম্যারেজ মিডিয়া তথা বড় কোম্পানি। এতো বড় মাপের কোম্পানিগুলো তো ফেসবুকে টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন পোস্ট করে কিংবা পত্রিকা, টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়। তারা ফেসবুকে পোস্টের কমেন্টে কিংবা গ্রুপে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে বিজ্ঞাপন পোস্ট করতে যাবে কোন দুঃখে? তারা কি ফকির নাকি? সুতরাং বুঝে নিন যে এরা আসলে বিবাহ মিডিয়ার কেউ নয় এবং এরা কোনো ঘটকও নয়, এরা হলো ধোঁকাবাজ।
তাই এসব ভুয়া ঘটক থেকে দূরে থাকুন এবং আপনার টাকা ও সময় সেভ করুন।

© লেখক: মেহেদী হাসান
(পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা এবং বিবাহ ও পারিবারিক জীবন বিষয়ক পরামর্শদাতা)।
সিইও, ম্যারেজ লিংক।
ওয়েবসাইট: www.marriagelinkbd.com
ই-মেইল: info@marriagelinkbd.com
ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপ: 01746315639

ধন্যবাদ |

Comments

Popular posts from this blog

বিডিজবস এর আবেদনে সময় সেভ করার উপায়!

চাকরির জন্য কীভাবে পারসোনাল ডেটাবুক তৈরি করবেন?