ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়— কথাটা ভুল, বাস্তবতার জ্ঞান ও কৌশল থাকলে সফল হওয়া যায়!


বর্তমান প্রেক্ষাপটে 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' কথাটা ভুল; কারণ বর্তমান সময়ের জটিল সামাজিক পরিস্থিতিতে এই কথাটা একটা আংশিক কথা, সম্পূর্ণ কথা তথা পূর্ণাঙ্গ ট্রিকস নয়। ইনট্রানজেটিভ ভার্ব এর যেমন অবজেক্ট না থাকার কারণে তার প্যাসিভ ভয়েস করা যায় না তেমনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে শুধু ইচ্ছা থাকলেই সফল হওয়া যায় না; ইচ্ছা তো থাকতে হবেই, সেইসাথে বাস্তবতায় জ্ঞান এবং কৌশল জানা থাকতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এবং সেইসাথে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে আজকাল মানুষজন সবকিছু নিয়েই ব্যবসা করে থাকে, সবকিছুকেই ব্যবসায়ী দৃষ্টিতে দেখে থাকে। সমাজে গড়ে উঠেছে একদল এজেন্ট শ্রেণি যারা বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে এবং তারা মানুষজনকে সাহায্য এবং পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ী আচরণ করে থাকে।
মানুষের স্বপ্ন, আবেগ ও বেকারত্বকে পুঁজি করে এমএলএমসহ বিভিন্ন নীতিবোধহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যারা তরুণদের এসব দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে দিয়ে মার্কেটিং ও সেলস/ সার্ভিস এর কাজও করছে।
বলতে শঙ্কা করি না যে শিক্ষাক্ষেত্রেও কিছু মানহীন সেবাদাতা বিজ্ঞাপন নির্ভর প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের কৌশল হলো অল্পবয়সী ছেলেমেয়েকে ভুলভাল বুঝিয়ে কিংবা বিজ্ঞাপনে ভুলিয়ে নিজের ব্যবসায় লাভবান হওয়া, এক্ষেত্রে নীতিবোধ এর কোনো বালাই নাই।

সেজন্যই বলছি, 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' কথাটা ভুল; কারণ মানুষ কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তা নয়, কোনোকিছু করতে গেলে সাহায্য কিংবা পরামর্শের জন্য তাকে অন্যের কাছে যেতেই হয়। আর এই যাওয়াটা যদি সঠিক যায়গায় না গিয়ে ভুল জায়গায় যাওয়া ঘটে থাকে তখনই বোঝা যায় যে আসলে 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' কথাটা ভুল, এরসাথে বাস্তবতার জ্ঞান এবং কৌশলও জানা থাকতে হয়।
একজন একটা পরামর্শ দিয়েছে; এখন তার কথা শুনেই তার দেখানো পদ্ধতি অনুসরণে হাত দিয়ে সময় ব্যয় করাটা নির্বুদ্ধিতা। কারণ যেসব কাজে ট্রাই করার সুযোগ সীমিত সেসব কাজে একজনের পরামর্শ নিয়ে তা এ-টু-জেড অ্যাপ্লাই করাটা অহেতুক ঝুঁকি নেওয়া ও একপ্রকার নির্বুদ্ধিতা হয়ে যায়। বরং একই বিষয়ে কয়েকজনের পরামর্শ নিয়ে তারমধ্যে থেকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্লেষণ করে নিজের ক্ষেত্রে উপযুক্ত একটি পন্থা তৈরি করতে পারলে সেটি সফলতার জন্য একটি উপযুক্ত রূপরেখা হিসেবে কাজ করে এবং এই পদ্ধতি খুব ভালো কাজে দেয়।
তাই মানহীন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সময় ব্যয় করা এবং দালালদের ফাঁদে পা দেওয়া এসব থেকে যদি বাঁচাতে না পারো তাহলে 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' এই অন্ধবিশ্বাস তোমার জীবনে যে বাস্তব শিক্ষা বয়ে আনবে তাতে তুমি আমার এই লেখার মর্মার্থ ঠিকমতো বুঝতে পারবে ঠিকই কিন্তু সমস্যা হলো বাস্তবে এই জ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে তোমার লাইফ থেকে কিছু জিনিস হারিয়ে যেতে পারে যেসব আর ফিরে পাবে না।

আমার ইচ্ছা আছে, আমি সফল হবোই— এটা ভেবে শুধু ইচ্ছার উপর নির্ভর করে নিশ্চিত না থেকে এরসাথে বাস্তবতা ও কৌশল বিষয়ে জ্ঞান নিয়ে নাও এবং দালালদের ও ধ্বংসাত্বক মানুষদের ফাঁদে পা দেওয়া হতে বাঁচাতে শিখো।

একটা উদাহরণ দিয়ে কথাটা ব্যাখ্যা করি। এক ছেলে আমাকে বলল যে সে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নিতে ইংলিশ এর ভোকাবলারির জন্য ডিকশনারি পড়তে চাচ্ছে। আমি বললাম, "তুমি সময় পাবে না"। সে বললো, "আমার সময় আছে ভাইয়া"। এক্ষেত্রে তার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বাস্তবতা ও কৌশলজ্ঞানের খুবই অভাব ছিল। কারণ ডিকশনারি পড়ে সে যে পরিমাণ সময় ব্যয় করবে তাতে অন্য পড়াগুলো সে কাভার করতে পারবে না, ফলে তার অন্য বিষয়গুলোর প্রিপারেশন ডাব্বা খাবে। আর ডিকশনারিতে এমন বহু শব্দ আছে যেগুলো জীবনে কখনও জানা, বলা কিংবা লেখার প্রয়োজন হয় না, যেমন- ভোঁদড় নামে বাংলাদেশে একটা প্রাণি ছিল যেটা একটা বিলুপ্ত প্রাণি। এই প্রাণিটার নাম আমি লাইফে শুধু একবার পড়েছিলাম ক্লাস ওয়ান এর বাংলা বইয়ের কবিতায় "তাই না দেখে ভোঁদড় নাচে"; আমার লাইফে আর কোনোদিন এই ভোঁদড় শব্দটা কোথাও বলতেও হয় নাই, কোথাও লিখতেও হয় নাই। ডিকশনারিতে এমন বহু শব্দ আছে যেগুলো আমাদের জানার কোনোই প্রয়োজন নেই, অ্যাডমিশন তো দূরের কথা লাইফেও কোনোদিন বলতে বা লিখতে হবে না। ডিকশনারির প্রায় ৯৭% শব্দই আমাদের লাইফে জানার দরকার হয় না। আমরা শুধু প্রয়োজনীয় শব্দার্থগুলো জানতে ডিকশনারি ব্যবহার করে থাকি।
তাই আমি সেই ছেলেকে পরামর্শ দিয়েছিলাম ডিকশনারি পড়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে বিভিন্ন ভালো প্রকাশনীর অ্যাডমিশনভিত্তিক যেসব ভোকাবলারির বই পাওয়া যায় সেসবের দু'একটা পড়তে।
এক্ষেত্রে আমি যদি তাকে ডিকশনারি পড়তে উৎসাহ দিয়ে বলতাম, "তোমার এতো পড়ার আগ্রহ! ফ্যান্টাস্টিক তো, পড়তে থাকো, অনেক কিছু শিখতে পারবে ব্লা ব্লা" তাহলে আমি তার কাছে তাৎক্ষণিকভাবে একজন প্রিয় মানুষ হতাম, কিন্তু বাস্তবে আমি হতাম তার লাইফের একজন ধ্বংসাত্মক মানুষ। তাই তাৎক্ষণিকভাবে তার কাছে প্রিয় মানুষ হওয়ার চিন্তা না করে বরং আমি তাকে বাস্তবতা ও কৌশলজ্ঞান বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি যাতে সে তার ইচ্ছাকে সফলতায় পরিণত করতে পারে।

তাই বুঝতেই পারছো, 'ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়' কথাটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরিণামদর্শী একটা কথা; শুধু আবেগপূর্ণ ইচ্ছাই নয় এরসাথে বাস্তবতার জ্ঞান এবং কৌশল জানা থাকতে হয়, তবেই সফলতা আসে।

© লেখা : মেহেদী হাসান ; বই : স্বপ্ন, ভালোবাসা ও বাস্তবতা।

Note : যারা 'স্বপ্ন, ভালোবাসা ও বাস্তবতা' বইটি প্রি-অর্ডার করতে চাও তারা বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজে মেসেজ করে রাখো। বইটি প্রকাশিত হওয়ামাত্র তোমাকে রিপ্লাই দেওয়া হবে।
টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজের লিংক→
http://facebook.com/timepublications

Life Academy — মেহেদী হাসান — টাইম পাবলিকেশন্স — Book Desk

Comments

Popular posts from this blog

অনলাইনের ভুয়া ঘটক চেনার উপায়!

বিডিজবস এর আবেদনে সময় সেভ করার উপায়!

চাকরির জন্য কীভাবে পারসোনাল ডেটাবুক তৈরি করবেন?