ফিউচার অ্যাসেট কী এবং এটি কেনো প্রয়োজনীয়?
লাইফ ডেভেলপমেন্ট
ফিউচার অ্যাসেট বিষয়টা সহজে বুঝানোর জন্য প্রথমে ছোট্ট একটা গল্প বলি। ঢাকায় একটি সামুচা-রুটি-পরোটার দোকানের সামনে একটি বড় কোম্পানির অফিস ছিল। একদিন এক ম্যানেজার সেই দোকানে সামুচা খেতে এলো। দুইটা সামুচা নিয়ে সে সামুচাওয়ালাকে প্রশ্ন করলো, "তুমি খুব সুন্দর করে দোকানটা সাজিয়েছো, সিস্টেমগুলো ভালো, সুন্দর এডমিনিষ্ট্রেশন, তাহলে তোমার এত সুন্দর প্ল্যানিং নিয়ে আমার মত জব করলে ভালো হতো না, এই সামুচা বিক্রি করে তুমি সময় নষ্ট করছো না তো?"
সামুচাওয়ালা হাসি দিয়ে বলল, "স্যার আমার কাজটা আপনার থেকে অনেক ভালো। আজ থেকে ১০ বছর আগে আমি সামুচা বিক্রি করতাম টুকরীতে। তখন আমার আয় ছিল ১০০০ টাকা মাস এবং আপনার বেতন ছিল ১০ হাজার। আজ ১০ বছর পর আমার আয় ১ লক্ষ এবং কোনো কোনো মাসে ১ লক্ষের বেশি আর আপনার বেতন এখন ১ লক্ষ। তাহলে আপনার থেকে আমার কাজটা বেশি ভালো না?
আমার পরে আমার এই ব্যবসা আমার ছেলে দেখবে। সে সাজানো একটা ব্যবসা পাবে কিন্তু আপনার ছেলেমেয়ে কি আপনার মতো পজিশন পাবে? আমি ০ থেকে শুরু করেছি কিন্তু আমার ছেলেমেয়েরা ০ থেকে শুরু করবে না। চাকরিজীবীগনের ছেলেমেয়েদের ০ থেকেই শুরু করতে হবে। আপনি চাইলেও আপনার পজিশনে আপনার ছেলেমেয়েকে বসাতে পারবেন না। আপনি ১০ বছর আগে যে কষ্টটা করেছেন আপনার ছেলেমেয়েদেরকেও একই কষ্ট করতে হবে। আমার ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত গুছিয়ে দেওয়া আমার দায়িত্ব আর আমি তাই করেছি যা আপনি পারেন নাই।"
একথা শুনে ম্যানেজার ৫০ টাকা বিল পরিশোধ করে চলে গেল। এন্টারপ্রেনারের জন্ম হয় কঠোর পরিশ্রমে যার পিছনে থাকে সূদৃড় সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও পরিশ্রম। আর সেই খাবারের দোকানটি শুধু একটি কন্টিনিউয়াস অ্যাসেট ছিল না, পাশাপাশি সেটি ছিল তার সন্তানের জন্য একটি ফিউচার অ্যাসেট।
সুতরাং ফিউচার অ্যাসেট হলো সেই অ্যাসেট বা সম্পদ যা শুরুতে ক্ষুদ্র কিন্তু এর ভবিষ্যৎ ফলদায়ক। আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচিৎ ত্রিশ বছর বয়সের আগে কিছু ফিউচার অ্যাসেট এর ভিত্তি স্থাপন করে রাখা যা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি রেডি করে রাখা অ্যাসেট হবে এবং আমরা সেই অ্যাসেট তাদেরকে দিয়ে নিজের দায়িত্বভার অনেকটা হালকা করে ফেলতে পারবো।
বিশেষ করে যারা প্রেম করো এবং বিয়ে করবে বলে দুজনে প্রতিজ্ঞা করেছো তাদের উচিৎ কিছু ফিউচার অ্যাসেটের ভিত্তি স্থাপন করে রাখা ও কন্টিনিউয়াস অ্যাসেটের পাশাপাশি সেই ফিউচার অ্যাসেটের পরিচর্যা করে যাওয়া।
এক্ষেত্রে আরও এরকম করা যায়— দম্পতিদের একজন জীবিকার জন্য কন্টিনিউয়াস অ্যাসেট নিয়ে কাজ করবে আর একজন ফিউচার অ্যাসেট নিয়ে কাজ করবে এবং আমি মনে করি ত্রিশ বছর বয়সের আগে ছেলেটার উচিত সেই ফিউচার অ্যাসেটের ভিত্তি স্থাপন করে তা একটু একটু করে সমৃদ্ধ করা আর বিয়ের পরে যখন ছেলেটা কন্টিনিউয়াস অ্যাসেট নিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকবে মেয়েটা সেই ফিউচার অ্যাসেটের পরিচর্যা করে যাবে।
আমার বিষয়টা আসলে উপরের গল্পের সাথে মিলবে না; তাই ধারণার সাথে মিলে এমন একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা ব্যাখ্যা করি।
ধরে নাও এক ছেলে ফটোগ্রাফিতে/ ভিডিওগ্রাফিতে খুব ভালো, তাই সে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফি/ ভিডিওগ্রাফি করে বেশ আয় করে। এক্ষেত্রে তার প্রেমিকার উচিৎ ফটো এডিটিং ও ভিডিও এডিটিং শিখে রাখা ও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা। ছেলেটা কোনো চাকরিতে জয়েন করলে মেয়েটা ডিজিটাল মার্কেটিং করে তার মার্কেটটা ধরে রাখতে পারবে আর নিজেদের পরিচিত কাছের একজন জুনিয়র ছেলেকে ফটোগ্রাফি/ ভিডিওগ্রাফিতে দক্ষ করে তুলে তাকে দিয়ে ফিল্ডের কাজ করে নিতে পারবে। ভবিষ্যতে একসময় সেই ছেলেও অন্য চাকরিতে যেতে পারে, তখন নিজের সন্তানরা এই ফিউচার অ্যাসেট নিয়ে কাজ করবে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং আরও বিভিন্ন জিনিস নিয়ে এরূপ ফিউচার অ্যাসেট ডেভেলপ করা যায়। বিষয়টা অবাক এবং হাস্যকর মনে হলেও ইউরোপ আমেরিকা ও উন্নত বিশ্বে দম্পতিরা এভাবেই ফিউচার অ্যাসেট নিয়ে কাজ করে থাকে এবং তাদের সন্তানকে বেহিসাবি টাকাপয়সা দিয়ে নষ্ট সন্তান বানানোর পরিবর্তে এই লয়ালটি অ্যাসেট দিয়ে একজন সন্তানকে স্বাবলম্বী সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে থাকে।
তাই প্রেমিক প্রেমিকারা খোশগল্পের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ফিউচার অ্যাসেটের জন্য কাজ শুরু করে দাও। সবার জন্য শুভকামনা।
© লেখা : মেহেদী হাসান ; বই : লাইফ হ্যাকস।
Note : যারা 'লাইফ হ্যাকস' বইটি প্রি-অর্ডার করতে চাও তারা বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজে মেসেজ করে রাখো। বইটি প্রকাশিত হওয়ামাত্র তোমাকে রিপ্লাই দেওয়া হবে।
টাইম পাবলিকেশন্স এর ফেসবুক পেজের লিংক→
http://facebook.com/timepublications
Life Academy — মেহেদী হাসান — টাইম পাবলিকেশন্স — Book Desk
Comments
Post a Comment